সিটি ব্যাংক লোন পাওয়ার উপায় ?
ব্যাংক লোন হল একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য গ্রাহকদের টাকা ধার দেওয়ার প্রস্তাব। তবে এই লোন বা ঋণের কিছু শর্ত থাকে। শর্ত হল ঋণের বিপরীতে ঋণগ্রহীতাকে প্রতি মাসে বা বছরে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ সুদ দিতে হবে ।
বাংলাদেশে অসংখ্য ব্যাংক রয়েছে, আর ব্যাংকের কাজই হল আর্থিক হিসাব নিকাশ, ঋণ দেয়া, টাকা জমা রাখা ইত্যাদি । বাংলাদেশ ব্যাংক বাদে প্রায় সব ব্যাংকের কার্যক্রমে মিল থাকলেও এক এক ব্যাংক একটি বিশেষ ক্ষেত্রে সুবিধা দিয়ে থাকে। যাতে গ্রাহক তার প্রতি আকৃষ্ট হয়। তো বাংলাদেশের একটি স্বনামধন্য বেসরকারি ব্যাংক হল সিটি ব্যাংক। আর এই ব্যাংকও গ্রাহকদের বিভিন্ন সুবিধা দিয়ে থাকে ।
আজকে আমরা জানব কীভাবে সিটি ব্যাংক লোন পাওয়া যায়। কারণ আমরা অনেকেই অনলাইনে সিটি ব্যাংকের লোন পাওয়ার নিয়মাবলি জানতে চাই। তাদের জন্যই আজকের আর্টিকেল টি লিখছি ।
সিটি ব্যাংক
১৯৮৩ সালে বাংলাদশের অন্যতম ব্যাংক দি সিটি ব্যাংক লিমিটেডের যাত্রা শুরু হয়। দেশের দুটি শেয়ার বাজারে এ ব্যাংকটি নিবন্ধিত। তবে ২০০৮ সালে ব্যাংকটির নাম পরিবর্তিত হয়ে ” সিটি ব্যাংক” হয় । এ ব্যাংকটি ব্যাংকিং সেবা, এটিএম সেবা, কনজিউমার ব্যাংকিং, কর্পোরেট ব্যাংকিং, বিনিয়োগ ব্যাংকিং ও ইসলামী ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে ।
বাংলাদেশে বর্তমানে সবচেয়ে ব্যবহৃত অ্যামেক্সের ক্রেডিট কার্ড ২০০৯ সালে সিটি ব্যাংকই চালু করেছে। সারাদেশে এই ব্যাংকে ১৩০ টি শাখা ও ৩৬৯ টি এটিএম বুথ আছে। সিটি ব্যাংক তার গ্রাকদের ৪ ধরণের লোন দিয়ে থাকে। তাদের লোন দেয়ার কার্যক্রম অনেক স্পষ্ট ।
চলুন জেনে নিই কীভাবে সিটি ব্যাংক লোন পাওয়া যায় ।
সিটি ব্যাংক লোন – City Bank Loan System
সিটি ব্যাংক যে ৪ ধরণের লোন প্রদান করে তা হলো:
১. অটো লোনঃ
সিটি ব্যাংকের অটো লোন বিষয়ক কিছু তথ্য:
★ সিটি ব্যাংকের অটো লোন পাওয়া যাবে সর্বনিম্ন ৩ লক্ষ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৪০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ।
★ এছাড়াও যানবাহন কেনার জন্য শর্তসাপেক্ষে যানবাহনের মোট মূল্যের ৫০% আপনি লোন পাবেন ।
★ লোন পরিশোধ করতে হবে ১২-৭২ মাসের মধ্যে ।
★ এই লোন নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো রকমের হিডেন বা গোপন চার্জ নেই ।
★ ক্যাশ সিকিউরিটির জন্য ১০০% লোন পাওয়া যাবে ।
কারা পাবেন এই অটো লোন:
★ ২২-৬৫ বছর বয়সী যে কোন নাগরিক সিটি ব্যাংকের এই লোন পাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারেন ।
★ চাকুরিজীবী হলে ১ বছরের চাকুরীর অভিজ্ঞতা ও ব্যবসায়ী হলে ২ বছরের ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতা থাকতে হবে অটো লোন পেতে ।
★ অটো লোন পেতে হলে অবশ্যই মাসিক আয় ৪০,০০০ টাকা হতে হবে ।
★ তবে এই লোন পেতে কোনো পার্সোনাল গ্রান্টার লাগবে না ।
★ সুদের হার প্রতিযোগিতামুলক ।
২. পার্সোনাল লোনঃ
সিটি ব্যাংকের পার্সোনাল লোন বিষয়ক কিছু তথ্য:
★ পার্সোনাল লোন ক্যাটাগরীর এই সিটি ব্যাংক লোন পাওয়া যাবে সর্বনিম্ন ১ লক্ষ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ।
★ লোন পরিশোধ করতে হবে ১২-৬০ মাসের মধ্যে ।
★ এই লোন নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো রকমের হিডেন বা গোপন চার্জ নেই ।
কারা পাবেন এই পার্সোনাল লোন:
★ ২২-৬৫ বছর বয়সী যে কোন নাগরিক সিটি ব্যাংকের এই লোন পাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারেন ।
★ কোন কাজে ১ বছরের বেতন ভুক্ত কর্মকর্তা হলে ।
★ যেকোন পেশাজীবীদের ২ বছরের স্ব স্ব পেশাগত অভিজ্ঞতা থাকলে ।
★ ব্যবসায়ী হলে ৩ বছরের ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতা থাকতে হবে পার্সোনাল লোন পেতে ।
★ নির্বাহী কর্মকর্তাদের পার্সোনাল লোন পেতে হলে তাদের মাসিক বেতন ২০,০০০/– হতে হবে ।
★ জমির মালিকদের পার্সোনাল লোন পেতে হলে তাদের মাসিক আয় ৩০,০০০/– হতে হবে ।
★ পেশাজীবীদের পার্সোনাল লোন পেতে হলে তাদের মাসিক আয় ৫০,০০০/– হতে হবে ।
★ ব্যবসায়ীদের পার্সোনাল লোন পেতে হলে তাদের মাসিক আয় ৫০,০০০/– হতে হবে ।
৩. হোম লোনঃ
সিটি ব্যাংকের হোম লোনের প্যাকেজটিতে ৫ লক্ষ টাকা থেকে ২ কোটি টাকা পর্যন্ত লোন নেওয়া যাবে। নিচে হোম লোনের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরা হলো।
সিটি ব্যাংকের হোম লোন বিষয়ক কিছু তথ্য:
★ সিটি ব্যাংকের হোম লোনের পরিমাণ ৫ লক্ষ টাকা থেকে ২ কোটি টাকা ।
★ ১ বছর থেকে ২৫ বছরের মধ্যে এই লোন পরিশোধ করতে হবে ।
★ হোম লোন সম্পত্তির মূল্যের ৭০% পর্যন্ত নেওয়া যায় ।
★ বাংলাদেশের নাগরিক না হলেও এই হোম লোন নিতে পারেন ।
★ এতে Overdraft সুবিধা রয়েছে।
★ দ্রুত বন্দোবস্ত সুবিধা আছে।
★ হোম লোনের ক্ষেত্রে কোনো লুকায়িত খরচ বা হিডেন চার্জ নেই।
★ হোম লোন দেশের যেকোনো স্থান থেকেই নেওয়া যাবে।
কারা পাবেন এই হোম লোন:
★ যাদের বয়স ২২-৬৫ বছর তারা হোম লোন পাওয়ার যোগ্য ।
★ হোম লোন পাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে ৩ বছরে অভিজ্ঞতা প্রয়োজন।
★ হোম লোন পেতে হলে মাসিক বেতন ৫০,০০০ টাকা বা তার বেশি হতে হবে।
★ তবে হোম লোন পাওয়ার ক্ষেত্রে সরকারি চাকুরিজীবী হলে মাসিক বেতন ৩০,০০০ টাকা বা তার বেশি।
৪. সিটি বাইক লোনঃ
সিটি ব্যাংকের বাইক লোন বিষয়ক কিছু তথ্য:
★ সিটি ব্যাংকের বাইক লোন পাওয়া যাবে সর্বোচ্চ ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ।
★ এছাড়া সিটি ব্যাংক বাইক লোনের জন্য বাইকের রেজিষ্ট্রেশন ফি সহ ৮০% ঋণ সুবিধা দিচ্ছে এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে ১০০% ঋণ সুবিধা দিচ্ছে ।
★ সিটি ব্যাংক বাইক লোন ঋণ পরিশোধের সময়কাল ৬ মাস থেকে ৩ বছর পর্যন্ত দিয়েছে ।
★ সিটি ব্যাংক বাইক লোনের ক্ষেত্রে মহিলাদের জন্য স্পেশাল ইন্টারেস্ট ও কোনো প্রসেসিং ফি নেই ।
★ বাইক লোনে ০% দ্রুত সেটেলমেন্ট ফি ।
★ সিটি ব্যাংক লোন সুবিধার বাইক লোন দিয়ে একাধিক বাইক কেনার সুবিধা আছে ।
★ বাইক লোন নিলে সিটি ব্যাংকের FDR এর উপর ৯০% লোন সুবিধা পাওয়া যাবে ।
কারা পাবেন এই বাইক লোন:
★ ২১ থেকে ৬৫ বছর বয়সী যেকোনো ব্যক্তি সিটি ব্যাংকের বাইক লোন পাবেন ।
★ তবে বাইক লোন পেতে নূন্যতম অভিজ্ঞতা লাগবে কমপক্ষে ১ বছরের বেতনভূক্ত কর্মী হিসেবে অভিজ্ঞতা ।
★ বাইক লোন পেতে ব্যবসায়ী, ফ্রিল্যান্সার ও চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে ১ বছর কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে ।
★ বাইক লোন পেতে রাইড শেয়ারিং সেবায় কাজ করলে ৬ মাসের অভিজ্ঞতা লাগবে ।
★ বাইক লোন পেতে প্রবাসীদের জন্য ৬ মাসের প্রবাস চাকরীর অভিজ্ঞতা লাগবে ।
★ বাইক লোন পেতে ন্যূনতম মাসিক আয় হতে হবে একজন বেতনভুক্ত কর্মীর ক্ষেত্রে (CBL staff): ১২,০০০ টাকা ।
★ বাইক লোন পেতে ব্যাংক একাউন্টে বেতন পাওয়া কর্মকর্তার বেতন হতে হবে: ১,৫০,০০০ টাকা ।
★ বাইক লোন পেতে ক্যাশে বেতন পাওয়া কর্মকর্তার বেতন হতে হবে ২০,০০০ টাকা ।
★ ব্যবসায়ী, পেশাজীবি, জমির মালিকের বাইক লোন পেতে মাসিক আয় ২৫,০০০ টাকা হতে হয় ।
★ বাইক লোন পেতে রাইড শেয়ারিং কর্মীর বেতন হতে হবে ১৫,০০০ টাকা ।
★ বাইক লোন পেতে বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনকারী প্রবাসীর আয় ২০,০০০ টাকা হতে হবে ।
সিটি ব্যাংক শুরু থেকেই তাদের সুষ্ঠ কার্যক্রমের মাধ্যমে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। তারা লোন পরিষেবা দেয়ার ক্ষেত্রেও এ সুনাম বজায় রেখেছে ।
যেকোন এক বা একাধিক ক্যাটাগরীর সিটি ব্যাংক লোন পেতে হলে উপরের শর্তাবলি মেনে চললে আপনি অবশ্যই লোন পাবেন। তবে অবশ্যই আপনাকে সুনাগরিক হতে হবে ।
সময়ের সাথে সাথে সিটি ব্যাংক হয়ত তাদের এসব নিয়মাবলির পরিবর্তন করতে পারে। তবে এখন পর্যন্ত লোন পেতে এই শর্তাবলিগুলোই কার্যকর আছে ।